![]() |
গীতা পঞ্চদশ-অধ্যায়-পুরুষোত্তম-যোগ |
গীতা পঞ্চদশ-অধ্যায়-পুরুষোত্তম-যোগ এর সমস্ত শ্লোকের অনুবাদ :-
শ্লোক ১৫.১:
পরমেশ্বর ভগবান বললেন - ঊর্ধ্বমূল ও অধঃশাখা-বিশিষ্ট একটি অব্যয় অশ্বত্থ বৃক্ষের কথা বলা হয়েছে। বৈদিক মন্ত্রসমূহ সেই বৃক্ষের পত্রস্বরূপ। যিনি সেই বৃক্ষটিকে জানেন, তিনিই বেদজ্ঞ।
শ্লোক ১৫.২:
এই বৃক্ষের শাখাসমূহ জড়া প্রকৃতির তিনটি গুণের দ্বারা পুষ্ট হয়ে অধোদেশে ও ঊর্ধ্বদেশে বিস্তৃত। ইন্দ্রিয়ের বিষয়সমূহই এই শাখাগণের পল্লব। এই বৃক্ষের মূলগুলি তধোদেশে প্রসারিত এবং সেগুলি মনুষ্যলোকে সকাম কর্মের বন্ধনে আবদ্ধ।
শ্লোক ১৫.৩ - ১৫.৪:
এই বৃক্ষের স্বরূপ এই জগতে উপলব্ধ হয় না। এর আদি, অন্ত ও স্থিতি যে কোথায় তা কেউই বুঝতে পারে না। তীব্র বৈরাগ্যরূপ অস্ত্রের দ্বারা দৃঢ়মূল এই বৃক্ষকে ছেদন করে সত্য বস্তুর অন্বেষণ করা কর্তব্য, যেখানে গমন করলে, পুনরায় ফিরে আসতে হয় না। স্মরণাতীত কাল হতে যাঁর থেকে সমস্ত কিছু প্রবর্তন ও বিস্তৃত হয়েছে, সেই আদি পুরুষের প্রতি শরণাগত হও।
শ্লোক ১৫.৫:
nirmāna-mohā jita-saṅga-doṣā
adhyātma-nityā vinivṛtta-kāmāḥ
dvandvair vimuktāḥ sukha-duḥkha-saṁjñair
gacchanty amūḍhāḥ padam avyayaṁ tat
adhyātma-nityā vinivṛtta-kāmāḥ
dvandvair vimuktāḥ sukha-duḥkha-saṁjñair
gacchanty amūḍhāḥ padam avyayaṁ tat
যাঁরা অভিমান ও মোহশূন্য, সঙ্গদোষ রহিত, নিত্য-অনিত্য বিচার পরায়ণ, কামনা-বাসনা বর্জিত, সুখ- দুঃখ আদি দ্বন্দ্বসমূহ থেকে মুক্ত এবং মোহমুক্ত, তাঁরাই সেই অব্যয় পদ লাভ করেন।
শ্লোক ১৫.৬:
na tad bhāsayate sūryo
na śaśāṅko na pāvakaḥ
yad gatvā na nivartante
tad dhāma paramaṁ mama
na śaśāṅko na pāvakaḥ
yad gatvā na nivartante
tad dhāma paramaṁ mama
সূর্য, চন্দ্র, অগ্নি বা বিদ্যুৎ আমার সেই পরম ধামকে আলোকিত করতে পারে না। সেখানে গেলে আর জড় জগতে ফিরে আসতে হয় না।
শ্লোক ১৫.৭:
mamaivāṁśo jīva-loke
jīva-bhūtaḥ sanātanaḥ
manaḥ-ṣaṣṭhānīndriyāṇi
prakṛti-sthāni karṣati
jīva-bhūtaḥ sanātanaḥ
manaḥ-ṣaṣṭhānīndriyāṇi
prakṛti-sthāni karṣati
এই জড় জগতে বদ্ধ জীবসমূহ আমার সনাতন বিভিন্নাংশ। জড়া প্রকৃতির বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার ফলে তারা মন সহ ছয়টি ইন্দ্রিয়ের দ্বারা প্রকৃতিরূপ ক্ষেত্রে কঠোর সংগ্রাম করছে।
শ্লোক ১৫.৮:
বায়ু যেমন ফুলের গন্ধ নিয়ে অন্যত্র গমন করে, তেমনই এই জড় জগতে দেহের ঈশ্বর জীব এক শরীর থেকে অন্য শরীরে তার জীবনের বিভিন্ন ধারণাগুলি নিয়ে যায়।
শ্লোক ১৫.৯:
এই জীব চক্ষু, কর্ণ, ত্বক, জিহ্বা, নাসিকা ও মনকে আশ্রয় করে ইন্দ্রিয়ের বিষয়সমূহ উপভোগ করে।
শ্লোক ১৫.১০:
মূঢ় লোকেরা দেখতে পায় না কিভাবে জীব দেহ ত্যাগ করে অথবা প্রকৃতির গুণের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে কিভাবে তার পরবর্তী শরীর সে উপভোগ করে। কিন্তু জ্ঞান-চক্ষুবিশিষ্ট ব্যক্তিগণ সমস্ত বিষয় দেখতে পান।
শ্লোক ১৫.১১:
yatanto yoginaś cainaṁ
paśyanty ātmany avasthitam
yatanto ’py akṛtātmāno
nainaṁ paśyanty acetasaḥ
paśyanty ātmany avasthitam
yatanto ’py akṛtātmāno
nainaṁ paśyanty acetasaḥ
আত্মজ্ঞানে অধিষ্ঠিত যত্মশীল যোগিগণ, এই তত্ত্ব দর্শন করতে পারেন। কিন্তু আত্ম-তত্ত্বজ্ঞান রহিত অবিবেকী গণ যত্মপরায়ণ হয়েও এই তত্ত্ব অবগত হয় না।
শ্লোক ১৫.১২:
সূর্যের যে জ্যোতি এবং চন্দ্র ও অগ্নির যে জ্যোতি সমগ্র জগতকে উদ্ভাসিত করে, তা আমারই তেজ বলে জানবে।
শ্লোক ১৫.১৩:
আমি পৃথিবীতে প্রবিষ্ট হয়ে আমার শক্তির দ্বারা সমস্ত জীবদের ধারণ করি এবং রসাত্মক চন্দ্ররূপে ধান, যব আদি ওষধি পুষ্ট করছি।
শ্লোক ১৫.১৪:
আমি জঠরাগ্নি রূপে প্রাণীগণের দেহে আশ্রয় করে প্রাণ ও অপান বায়ুর সংযোগে চার প্রকার খাদ্য পরিপাক করি।
শ্লোক ১৫.১৫:
sarvasya cāhaṁ hṛdi sanniviṣṭo
mattaḥ smṛtir jñānam apohanaṁ ca
vedaiś ca sarvair aham eva vedyo
vedānta-kṛd veda-vid eva cāham
mattaḥ smṛtir jñānam apohanaṁ ca
vedaiś ca sarvair aham eva vedyo
vedānta-kṛd veda-vid eva cāham
আমি সমস্ত জীবের হৃদয়ে অবস্থিত এবং আমার থেকেই স্মৃতি, জ্ঞান ও বিলোপ হয়। আমিই সমস্ত বেদের জ্ঞাতব্য এবং আমিই বেদান্তকর্তা ও বেদবিৎ।
শ্লোক ১৫.১৬:
ক্ষর ও অক্ষর দুই প্রকার জীব রয়েছে। এই জড় জগতের সমস্ত জীবকে ক্ষর এবং চিৎ-জগতের সমস্ত জীবকে অক্ষর বলা হয়।
শ্লোক ১৫.১৭:
এই উভয় থেকে ভিন্ন উত্তম পুরুষকে বলা হয় পরমাত্মা, যিনি ঈশ্বর ও অব্যয় এবং ত্রিজগতের মধ্যে প্রবিষ্ট হয়ে পালন করছেন।
শ্লোক ১৫.১৮:
যেহেতু আমি ক্ষরের অতীত এবং অক্ষর থেকেও উত্তম, সেই হেতু জগতে ও বেদে আমি পুরুষোত্তম নামে বিখ্যাত।
শ্লোক ১৫.১৯:
yo mām evam asammūḍho
jānāti puruṣottamam
sa sarva-vid bhajati māṁ
sarva-bhāvena bhārata
jānāti puruṣottamam
sa sarva-vid bhajati māṁ
sarva-bhāvena bhārata
হে ভারত! যিনি নিঃসন্দেহে আমাকে পুরুষোত্তম বলে জানেন, তিনি সর্বজ্ঞ এবং তিনি সর্বতোভাবে আমাকে ভজনা করেন।
শ্লোক ১৫.২০:
হে নিষ্পাপ অর্জুন! হে ভারত! এভাবেই সবচেয়ে গোপনীয় শাস্ত্র আমি তোমার কাছে প্রকাশ করলাম। যিনি এই তত্ত্ব অবগত হয়েছেন, তিনি প্রকৃত বুদ্ধিমান ও কৃতার্থ হন।
সমাপ্ত