গীতা ষোড়শ অধ্যায় দৈবাসুর-সম্পদ-বিভাগ যোগ ( Bhagavad Gita 16th Chapter - The Divine And Demoniac Natures )

গীতা ষোড়শ অধ্যায় দৈবাসুর-সম্পদ-বিভাগ যোগ
গীতা ষোড়শ অধ্যায় দৈবাসুর-সম্পদ-বিভাগ যোগ

গীতা ষোড়শ অধ্যায় দৈবাসুর-সম্পদ-বিভাগ যোগ এর সমস্ত শ্লোকের অনুবাদ :-


শ্লোক ১৬.১ - ১৬.৩:

śrī-bhagavān uvāca
abhayaṁ sattva-saṁśuddhir
jñāna-yoga-vyavasthitiḥ
dānaṁ damaś ca yajñaś ca
svādhyāyas tapa ārjavam
ahiṁsā satyam akrodhas
tyāgaḥ śāntir apaiśunam
dayā bhūteṣv aloluptvaṁ
mārdavaṁ hrīr acāpalam
tejaḥ kṣamā dhṛtiḥ śaucam
adroho nāti-mānitā
bhavanti sampadaṁ daivīm
abhijātasya bhārata

পরমেশ্বর ভগবান বললেন-হে ভারত! ভয়শূন্যতা, সত্তার পবিত্রতা, পারমার্থিক জ্ঞানের অনুশীলন, দান, আত্মসংযম, যজ্ঞ অনুষ্ঠান, বৈদিক শাস্ত্র অধ্যয়ন, তপশ্চর্যা, সরলতা, অহিংসা, সত্যবাদিতা, ক্রোধশূন্যতা, বৈরাগ্য, শান্তি, অন্যের দোষ দর্শন না করা, সমস্ত জীবে দয়া, লোভহীনতা, মৃদুতা, লজ্জা, অপচলতা, তেজ, ক্ষমা, ধৈর্য, শৌচ, মাৎসর্য শূন্যতা, অভিমান শূন্যতা- এই সমস্ত গুণগুলি দিব্যভাব সমন্বিত ব্যক্তিদের মধ্যে দেখা যায়।

শ্লোক ১৬.৪:

dambho darpo ’bhimānaś ca
krodhaḥ pāruṣyam eva ca
ajñānaṁ cābhijātasya
pārtha sampadam āsurīm

হে পার্থ! দম্ভ, দর্প, অভিমান, ক্রোধ, রূঢ়তা ও অবিবেক - এই সমস্ত সম্পদ আসুরিক ভাবাপন্ন ব্যক্তিদের লাভ হয়।

শ্লোক ১৬.৫:

দৈবী সম্পদ মুক্তির অনুকূল, আর আসুরিক সম্পদ বন্ধনের কারণ বলে বিবেচিত হয়। হে পান্ডুপুত্র! তুমি শোক করো না, কেন না তুমি দৈবী সম্পদ সহ জন্মগ্রহণ করেছ।

শ্লোক ১৬.৬:

হে পার্থ! এই সংসারে দৈব ও আসুরিক - এই দুই প্রকার জীব সৃষ্টি হয়েছে। দৈব সম্বন্ধে বিস্তারিতভবে বলা হয়েছে। এখন আমার থেকে অসুর প্রকৃতি সম্বন্ধে শ্রবণ কর।

শ্লোক ১৬.৭:

অসুরস্বভাব ব্যক্তিরা ধর্ম বিষয়ে প্রবৃত্ত এবং অধর্ম বিষয় থেকে নিবৃত্ত হতে জানে না। তাদের মধ্যে শৌচ, সদাচার ও সত্যতা বিদ্যমান নেই।

শ্লোক ১৬.৮:

আসুরিক স্বভাববিশিষ্ট ব্যক্তিরা বলে যে, এই জগৎ মিথ্যা, অবলম্বনহীন ও ঈশ্বরশূন্য। কামবশত এই জগৎ উৎপন্ন হয়েছে এবং কাম ছাড়া আর অন্য কোন কারণ নেই।

শ্লোক ১৬.৯:

এই প্রকার সিদ্ধান্ত অবলম্বন করে আত্মতত্ত্ব-জ্ঞানহীন, অল্প-বুদ্ধিসম্পন্ন, উগ্রকর্মা ও অনিষ্টকারী অসুরেরা জগৎ ধ্বংসকারী কার্যে প্রভাব বিস্তার করে।

শ্লোক ১৬.১০:

সেই আসুরিক ব্যক্তিগণ দুষ্পরণীয় কামকে আশ্রয় করে দম্ভ, মান ও মদমত্ত হয়ে অশুচি কার্যে ব্রতী হয় এবং মোহবশত অসৎ বিষয়ে প্রবৃত্ত হয়।

শ্লোক ১৬.১১ - ১৬.১২:

অপরিমেয় দুশ্চিন্তার আশ্রয় গ্রহণ করে মৃত্যুকাল পর্যন্ত ইন্দ্রিয়সুখ ভোগকেই তারা তাদের জীবনের চরম উদ্দেশ্য বলে মনে করে। এভাবেই শত শত আশাপাশে আবদ্ধ হয়ে এবং কাম ও ক্রোধ-পরায়ণ হয়ে তারা কাম উপভোগের জন্য অসৎ উপায়ে অর্থ সঞ্চয়ের চেষ্টা করে।

শ্লোক ১৬.১৩ - ১৬.১৫:

idam adya mayā labdham
imaṁ prāpsye manoratham
idam astīdam api me
bhaviṣyati punar dhanam
asau mayā hataḥ śatrur
haniṣye cāparān api
īśvaro ’ham ahaṁ bhogī
siddho ’haṁ balavān sukhī
āḍhyo ’bhijanavān asmi
ko ’nyo ’sti sadṛśo mayā
yakṣye dāsyāmi modiṣya
ity ajñāna-vimohitāḥ

অসুরস্বভাব ব্যক্তিরা মনে করে- “আজ আমার দ্বারা এত লাভ হয়েছে এবং আমার পরিকল্পনা অনুসারে আরও লাভ হবে। এখন আমার এত ধন আছে এবং ভবিষ্যতে আরও ধন লাভ হবে। ঐ শত্রু আমার দ্বারা নিহত হয়েছে এবং অন্যান্য শত্রুদেরও আমি হত্যা করব। আমিই ঈশ্বর, আমি ভোক্তা। আমিই সিদ্ধ, বলবান ও সুখী। আমি সবচেয়ে ধনবান এবং অভিজাত আত্মীয়স্বজন পরিবৃত। আমার মতো আর কেউ নেই। আমি যজ্ঞ অনুষ্ঠান করব, দান করব এবং আনন্দ করব।” এভাবেই অসুরস্বভাব ব্যক্তিরা অজ্ঞানের দ্বারা বিমোহিত হয়।

শ্লোক ১৬.১৬:

নানা প্রকার দুশ্চিন্তায় বিভ্রান্ত হয়ে এবং মোহজালে বিজড়িত হয়ে কামভোগে আসক্তচিত্ত সেই ব্যক্তিরা অশুচি নরকে পতিত হয়।

শ্লোক ১৬.১৭:

সেই আত্মভিমানী, অনম্র এবং ধন ও মানে মদান্বিত ব্যক্তিরা অবিধিপূর্বক দম্ভ সহকারে নামমাত্র যজ্ঞের অনুষ্ঠান করে।

শ্লোক ১৬.১৮:

অহঙ্কার, বল, দর্প, কাম ও ক্রোধকে আশ্রয় করে অসুরেরা স্বীয় দেহে ও পরদেহে অবস্থিত পরমেশ্বর স্বরূপ আমাকে দ্বেষ করে এবং সাধুদের গুণেতে দোষারোপ করে।

শ্লোক ১৬.১৯:

tān ahaṁ dviṣataḥ krūrān
saṁsāreṣu narādhamān
kṣipāmy ajasram aśubhān
āsurīṣv eva yoniṣu

সেই বিদ্বেষী, ক্রুর ও নরাধমদের আমি এই সংসারেই অশুভ আসুরী যোনিতে অবিরত নিক্ষেপ করি।

শ্লোক ১৬.২০:

হে কৌন্তেয়! জন্মে জন্মে অসুরযোনি প্রাপ্ত হয়ে, সেই মূঢ় ব্যক্তিরা আমাকে লাভ করতে অক্ষম হয়ে তার থেকেও অধম গতি প্রাপ্ত হয়।

শ্লোক ১৬.২১:

tri-vidhaṁ narakasyedaṁ
dvāraṁ nāśanam ātmanaḥ
kāmaḥ krodhas tathā lobhas
tasmād etat trayaṁ tyajet

কাম, ক্রোধ ও লোভ- এই তিনটি নরকের দ্বার, অতএব ঐ তিনটি পরিত্যাগ করবে।

শ্লোক ১৬.২২:

হে কৌন্তেয়! এই তিন প্রকার তমোদ্বার থেকে মুক্ত হয়ে মানুষ আত্মার শ্রেয় আচরণ করেন এবং তার ফলে পরাগতি লাভ করে থাকেন।

শ্লোক ১৬.২৩:

যে শাস্ত্রবিধি পরিত্যাগ করে কামাচারে বর্তমান থাকে, সে সিদ্ধি, সুখ অথবা পরাগতি লাভ করতে পারে না।

শ্লোক ১৬.২৪:

অতএব, কর্তব্য ও অকর্তব্য নির্ধারণে শাস্ত্রই তোমার প্রমাণ। অতএব শাস্ত্রীয় বিধানে কথিত হয়েছে যে কর্ম, তা জেনে তুমি সেই কর্ম করতে যোগ্য হও।

সমাপ্ত