কেন পান্ডবরা নরকে গেলো এবং দুর্যোধন স্বর্গে গেলো

পাণ্ডবরা নীতিবান হওয়া সত্ত্বেও কেন তাদের নরকে যেতে হল। অন্যদিকে দুর্যোধন অনীতির পথে জীবন অতিবাহিত করেও কি করে স্বর্গে গেলো ? কেন পান্ডবরা নরকে গেলো এবং দুর্যোধন স্বর্গে গেলো  এই প্রশ্নের উত্তর আমরা যাবো এই পোস্ট এ। 

why pandavas went to hell and duryodhana went to heaven
কেন পান্ডবরা নরকে গেলো এবং দুর্যোধন স্বর্গে গেলো


আজ আমরা জানব কেন পান্ডবরা নরকে গেলো এবং দুর্যোধন স্বর্গে গেলো? মহাভারতের যুদ্ধের পরে পাণ্ডবরা ৩৬ বছর অবধি হস্তিনাপুরে রাজত্ব করেছিল। মহর্ষি বেদব্যাসের উপদেশমতো পাণ্ডবরা দ্রৌপদী সহ স্বর্গে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।পাণ্ডবরা! তাদের পুরো সাম্রাজ্যভার তাদের উত্তরসূরি অভিমন্যু পুত্র পরিক্ষিত মহারাজের হাতে তুলে দিলেন। স্বর্গে পৌঁছানোর পথে দ্রৌপদী ও চার ভাই অর্জুন,ভীম, নকুল, সহদেব  মারা গেলেন। যুধিষ্ঠির! তাঁর একমাত্র সঙ্গী একটি কুকুরের সাথে স্বর্গে পৌঁছেছিলেন। স্বর্গে পৌঁছে যুধিষ্ঠির দেখলেন যে দুর্যোধন রাজ সিংহাসনের উপরে বসে আছেন, এখানে আর কেউ নেই। এই দৃশ্য দেখার পরে যুধিষ্ঠির দেবদেবীদের বললেন যে, যেখানেই আমার ভাই ও দ্রৌপদী চলে গেছে আমিও সেখানে যেতে চাই। তাদের সাথে না থাকলে তারও এখানে থাকার ইচ্ছা আমার নেই।


তখন দেবদেবীরা বললেন, আপনার যদি এই ইচ্ছা থাকে তবে এই দেবদূতের সাথে চলে যান। তিনি আপনাকে আপনার ভাইদের কাছে নিয়ে যাবেন। যুধিষ্ঠির সেই দেবদূতের সাথেই চলে গেলেন। দেবদূত তাকে যে পথে নিয়ে গেলেন সেই পথটিতে চারদিকে প্রচণ্ড অন্ধকার ছিল, চারপাশে দুর্গন্ধ ছিল, এদিক সেদিক লাশ পড়েছিল, লোহার মতো তীক্ষ ঠোঁটওয়ালা কাক ও শকুনি চারিদিকে ঘুরছিলো। 


তিনি সেই দুর্গন্ধে বিরক্ত হয়ে দেবদূতকে জিজ্ঞাসা করলেন, আমাদের এই পথে কতক্ষণ চলতে হবে? এবং আমার ভাইয়েরা কোথায়? যুধিষ্ঠিরের এই কথা শুনে দেবদূত বললেন,দেবতারা বলেছেন... যে আপনি যখন ক্লান্ত হয়ে যাবেন তখন আমি আপনাকে যেন ফিরিয়ে নিয়ে যাই। যদি আপনি ক্লান্ত হয়ে থাকেন তবে আমি আপনাকে ফিরিয়ে নিয়ে যাব। 


আরও পড়ুন : কি ভাবে ভগবান রাম এই পৃথিবী ছেড়েছিলেন


যুধিষ্ঠিরও ফেরার ইচ্ছা করেছিলেন। যখন যুধিষ্ঠির ফিরে আসছিলেন তখন তিনি দুঃখী লোকদের কন্ঠস্বর শুনলেন। সেই দুঃখী লোকেরা নিজেদের পাণ্ডব বলে পরিচয় দিলেন।  তখন যুধিষ্ঠির দেবদূতকে বলেছিলেন যে আপনি দেবদেবীদের কাছে ফিরে যান, আমার ভাইরা যদি সুখ পান তবে আমি এখানেই থাকব।


দেবদূত দেবরাজ ইন্দ্রকে স্বর্গে ফিরে সে কথা বলেছিলেন। যুধিষ্ঠির কিছু সময়ই সেখানে  অতিবাহিত করেছিলেন, হঠাৎ সমস্ত দেবদেবতা যুধিষ্ঠিরের কাছে এলেন। দেবতাদের আগমণে সুগন্ধি বাতাসে চারপাশ সুগন্ধিত হয়ে উঠেছিল। যখন দেবরাজ ইন্দ্র যুধিষ্ঠিরকে বলেছিলেন যে আপনি যুদ্ধে অশ্বথামার মিথ্যে হত্যার কথা বলে দ্রোণাচার্যের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন। তাই প্রতারণার দ্বারা আপনাকে কিছুক্ষণ নরক দেখতে হলো।


এখন আপনি আমার সাথে স্বর্গে যাবেন, আপনার ভাইরা ইতিমধ্যে সেখানে পৌঁছেগেছেন ! যুধিষ্ঠির পৌঁছানোর পর ভীম তাকে জিজ্ঞাসা করলেন দাদা! দুর্যোধন পুরো অধার্মিক জীবন যাপন করেছিল, সে তাঁর পুরো জীবনে কোন ধর্মীয় কাজ করেনি তাও সে স্বর্গে স্থান পেয়েছে? ভগবানের বিচারের এটি কি কোনো ভুল ? যুধিষ্ঠির বলেছিলেন, ঈশ্বরীয় বিধি অনুসারে প্রতিটি পুণ্যের ফলস্বরূপ, স্বর্গ পায়। সমস্ত অনীতি সত্ত্বেও দুর্যোধনে একটি পুণ্য ছিল,  এর ফলস্বরূপ তিনি স্বর্গ পেয়েছেন।


ভীম জিজ্ঞাসা করল, কি সেই পুন্য? ভীমের কৌতূহলকে শান্ত করার জন্য ধর্মরাজ  যুধিষ্ঠির বলেছিলেন, পূর্ববর্তী জীবনে দুর্যোধন এর লক্ষ বেশ স্পষ্ট ছিল।  একই উদ্দেশ্য পূরণে দুর্যোধন যথাসাধ্য চেষ্টা করেছিলেন। দুর্যোধন শৈশব থেকেই সঠিক সংষ্কার থেকে বঞ্চিত ছিলেন এই কারণেই তিনি সত্যকে সব সময় অবহেলা করেছেন। কিন্তু নিজের লক্ষপূর্তির পথে যত রকম বাধা এসেছিল তা বিবেচনা না করেই দুর্যোধন চেষ্টা করে গেছেন। সেই চেষ্টাই তার জন্য মঙ্গলকারী হয়েছিল। 


যুধিষ্ঠির বলেন যে, নিজের উদ্দেশ্যকে সাধন করা চেষ্টা করা মানুষের অন্যতম বৃহত গুণ। যুধিষ্ঠিরের কথা শুনে ভীমের কৌতূহল শান্ত হয়ে গেল এবং দুর্যোধন ও পাণ্ডব একে অপরের সাথে কিছুটা সময় কাটিয়েছিলেন।